শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা ভবন থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যৌথভাবে আঁকা একটি চিত্রকর্ম সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে, খোদ চারুকলা বিভাগের সাবেক পরিচালক আশরাফুল আলম পপলুর বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের ১৮ মার্চ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ফ্রান্স প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে একটি ছবি এঁকে উপহার দেন শিল্পকলা একাডেমিকে।
ফ্রান্স সরকারের ‘নাইট ইন দ্য অর্ডার অব আর্ট অ্যান্ড লিটারেচার’ উপাধি পাওয়া শিল্পী শাহাবুদ্দিন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যৌথভাবে আঁকা চিত্রটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে কোটি টাকা হবে বলে ধারণা, দেশের শিল্পবোদ্ধাদের।
গ্যালারি কায়ার স্বত্তাধিকারী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘এটার মূল্য তো অন্যরকম। এর মূল্য অনেকটাই অকশনের মতই, বলা যেতে পারে কালেক্টেড মাস্টারপিস। এর দাম কোটিও ছাড়াতে পারে।’

তবে ২০১৯ সালে শিল্পকলা একাডেমির সম্পদ এই ছবিটি গোপনে নিজের বাসায় নিয়ে যান একাডেমীর চারুকলা বিভাগের সাবেক পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু। ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান এই চিত্রকর্ম ফেরত চেয়ে এরইমধ্যে পপলুকে দুইবার লিখিত নির্দেশ দিয়েও সাড়া পায়নি কর্তৃপক্ষ। গেল বছরের জানুয়ারিতে তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে সেটি ফেরত চেয়ে পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা পপলুকে চিঠিও দেয়া হয়। উল্টো ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ছবিটি নিজের সম্পদ বলে দাবি করেন পপলু।

আশরাফুল আলম পপলু জানান, ‘কেউ কাউকে কোন কিছু দিলে তো ফেরতের প্রসঙ্গ আসে। একান্ত ব্যক্তিগতভাবেই আয়োজন করেছিলাম আমি। এটা আমার কাছে রক্ষিত আছে ঠিকই। যখন আমাদের সিদ্ধান্ত হবে কোথাও আমরা দিবো বা হস্তান্তর করবো, তখন আমি দিবো।’
এ বিষয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিন শিল্পকলা একাডেমিকে জানিয়েছেন, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী ছবিটি শিল্পকলা একাডেমির সংগ্রহশালায় রাখার জন্য উপহার দেন।

শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের কর্মকর্তা তৈমুর হান্নান বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে উনার যখন মেয়াদ শেষ হয় তার সপ্তাহখানেক পরই খবর আসে এটা উনি উনার ব্যক্তিগত সংগ্রহে নিয়ে গেছেন। শাহাবুদ্দিন স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উনি স্পষ্ট করে বলেন, এটা শিল্পকলা একাডেমির সম্পদ।’
তদন্তে জানা যায় শিল্পকলা একাডেমিতে চাকুরীরত অবস্থায় ছবি আত্মসাৎ ছাড়াও নানা ঘটনায় বিতর্কিত পপলু। সম্প্রতি এক সংস্কৃতিজনকে মারধর করে রক্তাক্ত করা ছাড়াও নানা অভিযোগ রয়েছে।
চারুকলা বিভাগের বর্তমান পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম জানান, চিত্রকর্মটি উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি একজনের বাসায় আছে। চিত্রকর্মটি শিল্পকলা একাডেমির যা ন্যাশনাল পর্যায়ে শিল্পকলার কাছেই থাকা উচিত। আমি আইনের মাধ্যমে থেকে যে ধরনের নির্দেশ দেয়া হবে সেটাই ব্যবহার করবো।’