শীতে ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

স্বাস্থ্য

শীতকালে আবহাওয়াজনিত কারণে আমাদের সকলেরই কমবেশি ত্বক শুষ্ক হওয়ার পাশাপাশি নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় ত্বকের জন্য সরকার বাড়তি পরিচর্যা ও যত্নের।

শীত চলে এসেছে, শুষ্ক প্রকৃতি, বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীতকালে আমাদের ত্বকও হয়ে উঠে শুষ্ক। এ কারণে ত্বক স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। এছাড়া শুষ্ক ও শীতল হাওয়া এবং ধুলাবালু বেড়ে যাওয়ায় ত্বক হয়ে উঠতে পারে মলিন ও খসখসে। তাই প্রয়োজন একটি বাড়তি যত্নের। নয়তো ত্বকে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে লিখেছেন ডাঃ আজমল হাসপাতালের ডার্মাটোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. শেখ আরিফুর রহমান।

যেসব কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ঃ

  • আমাদের দেশে শীতকাল মূলত শুষ্ক ঋতু। এই ঋতুতে ঠান্ডা বাতাসের প্রভাবে প্রকৃতি তার আর্দ্রতা হারায়। সেই সাথে আমাদের ত্বকও পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না। ফলে ত্বক হয়ে উঠে শুষ্ক।
  • বয়স্কদের, বিশেষত যাদের বয়স চল্লিশ বছরের বেশি তাদের জিনগত কারণে তেল ও ঘর্মগ্রন্থির পরিমাণ ও কর্মক্ষমতা কমে যায় ফলে ত্বকে আসে শুষ্কতা।অনেক সময় বিভিন্ন পেশাজীবীদের কর্মস্থলের পরিবেশ যেমনঃ ধুলাবালি,স্যাতস্যাতে পরিবেশ ইত্যাদি ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে পারে।
  • অতিরিক্ত ক্ষার বা ক্লোরিনযুক্ত পানিতে গোসল বা সাঁতার কাটলে।
  • অতিরিক্ত ধুমপান বা অ্যালকোহল সেবনের বদভ্যাস থাকলেও ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়।
  • ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ এর অভাব জনিত কারণে।
  • আমিষ, জিংক বা ফ্যাটি এসিডের অভাব থাকলে।
  • যাদের এটপিক ডার্মাটাইটিস বা এলার্জিজনিত একজিমা থাকে তাদের ত্বক শুষ্ক হয়।
  • অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা বা সোরিয়াসিস ত্বক শুষ্কতার কারণ।
  • কিছু মেডিসিন,ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোনজনিত জটিলতার কারণে।
  • হঠাৎ করে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ক্রাশ ডায়েটিং থেকেও ত্বকে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও কিছু অভ্যাস জনিত কারণে, যেমনঃ বার বার হাত ধোঁয়া, বারবার গোসল, ক্ষারীয় সাবানের যথেচ্ছ ব্যবহার ত্বক শুষ্ক করে।

শীতকালে ত্বককে সুস্থ রাখতে প্রতিরোধে করণীয়

  • প্রতিদিন নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
  • প্রচুর পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি নরম সুতি কাপড় পরিধান করতে হবে।
  • অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার না করা।
  • অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ ও মাথা ধোয়া উচিত না। অতিরিক্ত গরম পানির প্রভাবে মুখের ত্বকের ফলিকেলগুলো ক্ষতগ্রস্থ হয়। ফলে ত্বকে আসে শুষ্কতা।
  • গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা জোজবা অয়েল মিশিয়ে নিলে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • ইউরিয়াযুক্ত বা পেট্রলিয়ামযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার হাত ও পায়ের তালুর আর্দ্রতা রাখতে সহায়তা করে।
  • স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত লোশন নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

যেসব টিপস মেনে চললে সহজেই ত্বকে আদ্রাতা ধরে রাখা সম্ভব

  • গোসলের পর শরীর ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা।
  • বারবার পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা।
  • গরম পানির ব্যবহার সীমিত রাখা।
  • নারিকেল তেল বা অলিভওয়েলের সাথে রাতে গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
  • নিমপাতা বা ফিটকিরি মিশ্রিত পানি দয়ে গোসল করলে শুষ্ক ত্বকে জীবানু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
  • শুকনা ঠোট বার বার জিহবা দিয়ে ভেজান উচিত নয়।

ত্বকের সঠিক ও পর্যাপ্ত যত্ন নেবার পরও যদি ত্বক তার আর্দ্রতা হারায়, লালচে র‍্যাশ উঠে, চুল্কানি বাড়ে অথবা কালো হয়ে যায়, মলিন দেখায় তাহলে অবশ্যই আপনার ত্বকে কোনো না কোনো সমস্যা বা অসুখ বাসা বাঁধছে। তাই এমন কিছু হলে দেরি না করে অবশ্যই চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।