ওয়াসার ভুলে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশ

ওয়াসার এক ভুলে, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শফিকুল ইসলাম।  ২০১২ সালে সরকারের বরাদ্দ দেয়া খাস জমির পরিবর্তে পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন আবাসিক ভবন ভেঙে পাম্প বসায় ওয়াসা।

নিজস্ব প্রতিবেদনেও এই ভুল স্বীকার করেছে সংস্থাটি। কিন্তু দুই বছরেও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়নি ওয়াসা।  তাই নিঃস্ব শফিকুল এখন থাকছেন ভাড়া বাসায়।  আর সব অভিযোগ শুনেও নির্বিকার ওয়াসার এমডি।  আরিফুর রহমানের প্রতিবেদন।  

পুরো ঘরে দারিদ্র স্পস্ট।  শো-কেসের ভেতরে, মেধা তালিকার ক্রেস্ট, সার্টফিকেট এখন অতীত জীবনের স্মৃতি।  বড় মেয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলো।  কিন্তু ঘরভাড়া দিতে হয় অন্যের টাকায়, তাই চিকিৎসক হবার লক্ষ্য জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। 

শফিকুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা টেনশনের জন্য। ঘুমালেও একটা- দেড়টার পর ঘুম ভেঙে যায়। বসে বসে সময় কাটাতে হয় দুশ্চিন্তায় ঘুম আসেনা। ভেবেই পাইনা কি করে চলবো।

দুর্দিনের শুরু ৮ বছর ৭ মাস আগে।  ২০১২ সালের ১৩ মে।  ঐদিন সকাল পর্যন্ত এখানে দোতলা বাড়ি ছিলো। ছিল একটি দোকানও। 

মোহাম্মদপুরের সরাই জাফরাবাদ এলাকার ১৩৫ নম্বর দাগের দশমিক শুন্য তিন একর জমি ওয়াসাকে বরাদ্দ দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।  অথচ ওয়াসা পাম্প স্থাপন করে ১৩৭ নম্বর দাগের শফিকুলের বাড়ি ভেঙে। বহুবার আপত্তি জানানো হয়েছে।  কোনো আকুতিও কানে নেয়নি  ঢাকা ওয়াসা।  

ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মকবুল সাহেবের মিষ্টি পানি দরকার উনি দূরের পানি খাবেন না। উনি বলছে আমার বাসার পাশে একটা পাম্প বসাতে হবে। এটা মিষ্টি পানি এটাই চাই আমাদের, তুই কই যাবি এটা তোর ব্যাপার। আমরা কিছু জানিনা। আমি অনেকভাবে ওয়াসাকে আবেদন করেছি কোন আবেদনে সাড়া দিয়ান ওয়াসা।’

শফিকুল ইসলামের স্ত্রী কান্না করতে করতে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা আমাদের শুধু ঘুরাচ্ছেন আজ-কাল-পরশু দিবে বলে। আমি ২০১২ সালের পর থেকে অনেক কষ্টে আছি।’

পরে, ২০১৮ সালে ভুল স্বীকারের পর, ২৭শে ডিসেম্বর, দখল করা জমি বাজারমূল্যে কিনে নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।  চার সদস্যের কমিটি গঠনকরে,  ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে, বাজার দর যাচাই করে জমি কেনার প্রস্তাব, দলিলের খসড়া কপি দাখিলের পরামর্শ দেয়া হয়। সেই ১৫ কার্যদিবস শেষ হয়নি দুবছরেও। তারপরও ওয়াসার এমডির কাছে নেই সুস্পষ্ট সমাধান। 

ওয়াসা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, ‘ওয়াসা তো জমি কিনতে পারবে না। ওয়াসার তো কেনার টাকা নেই। ২০১৮ সালে আমি যখনি শুনেছি বলেছি তাকে জায়গাটা ছেড়ে দেন। এই ভুল শুধরাতে কত বছর লাগবে আমি জানিনা। তবে বেশি সময় লাগা উচিত না। এই সময়ে কিছু বলতে পারবো না ফাইল দেখে সবার সাথে কথা বলে জানাতে হবে।’

এর আগে ২০১৬ সালেও একবার ওয়াসার ভুল সংশোধনের কথা দিয়েছিলেন ওয়াসার এমডি।  কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রাখেন নি তিনি।