বহির্বিশ্ব কার্যক্রম শর্টওয়েভে, দেশেই শোনা যায় না

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

পাঁচটি ভাষায় প্রচারিত হয় বহির্বিশ্ব কার্যক্রম; কিন্তু দেশের বাইরে কোথাও এ অনুষ্ঠান শুনতে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে- পাঁচটি ভাষায় প্রচার করা হয় অনুষ্ঠান। দু’বছর ধরে অ্যান্টেনা নষ্ট থাকায় দেশের বাইরে কোথাও রেডিওতে এ অনুষ্ঠান শুনতে পাওয়া যায় না। অ্যান্টেনা মেরামত না হলেও বা অনুষ্ঠান শোনা না গেলেও নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে।  যাতে জড়িত বাংলাদেশ বেতারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

বহির্বিশ্বে সম্প্রচারের জন্য সাভারের আশুলিয়ার কাছে কবিরপুরে বাংলাদেশ বেতারের একটি অ্যান্টেনা স্থাপিত হয় ২০১২ সালে। কিন্তু ভাল্ব নষ্ট থাকায় গত দুই বছর এই অ্যান্টেনাটির কার্যক্ষমতা নষ্ট। ফলে এর মাধ্যমে সম্প্রচার বন্ধ।

বেতার শিডিউল অনুযায়ী, বর্হিবিশ্ব কার্যক্রম প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত সময় ভাগ করে বাংলা, ইংরেজী, হিন্দি, উর্দু এবং নেপালী ভাষায় প্রচার হয়। কিন্তু কোথাও কেউ রেডিওতে এই অনুষ্ঠান শুনতে পায়না।

নেপাল থেকে এক শ্রোতা জানান বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের নেপালী ভাষায় অনুষ্ঠানটি তারা শুনতে পাননা। জেদ্দা থেকে এক প্রবাসী জানান, সৌদি আরব থেকে কোনভাবেই বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠানটি টিউন করা যায় না।

অ্যান্টেনাটি কাজ না করলেও বেতারের কয়েকজন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের অনুষ্ঠান সাভারের উচ্চশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-২ থেকে সম্প্রচার শুরু হয় শর্টওয়েভ ৬৩ পয়েন্ট৫ ১৬ মিটার ব্যান্ড এবং ৪৭৫০ কিলোহার্সে। কিন্তু যাদের জন্য এ কার্যক্রম তারা ঠিকমতো শুনতে পারননা, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও ভালোভাবে শুনতে পাওয়া যায়না।

উচ্চশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-২ এর প্রকৌশলীর কাছে প্রশ্ন ছিল যাদের জন্য এই বহির্বিশ্ব কার্যক্রম তারা শুনতে পান না কেন? জবাবে বাংলাদেশ বেতারের উচ্চশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-২ এর আবাসিক প্রকৌশলী সিরাজুর রহমান জানান, ‘নেপালী ভাষারটা এদেশে শুনে কি কোনও লাভ আছে? যখন যে দেশ বা অঞ্চল কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় তখন অ্যান্টেনা সেদিকে টার্গেট করা হয়। আর বর্তমানে যে অ্যান্টেনা কাজ করছে তা শুধু বাংলাদেশের জন্য। তাই দেশের বাইরে থেকে শুনতে পাওয়া যায় না।’

তিনি আরও জানান, আমরা চাইলে কার্যক্রমটি বন্ধ করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে কার্যক্রমের যে কাঠামো তৈরি হয়েছে তা ভেঙ্গে পড়তো। তাই আমরা এখনও কার্যক্রমটি চালিয়ে যাচ্ছি।

সরেজমিনে এক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বেতারের আগারগাঁও অফিসের স্টুডিওতে দেখা যায় বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে নেপালী ভাষায় অনুষ্ঠান চলছে। অনুষ্ঠানে অংশ নেন কয়েকজন নেপালী নাগরিক। অনুষ্ঠান শেষে তিনজন নেপালী নাগরিকের সাথেই কথা হয়। তারা নিয়মিত বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে অংশ নেন, কিন্তু নেপালে শুনতে পাওয়া যায় কি না তা নিশ্চিত নন।

অনুষ্ঠান প্রচারের পর তৈরি হয় বিল ভাউচার। ২০১৮ থেকে চলতি অর্থবছরে শুধু বহির্বিশ্বের অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তবে এসব বিষয়ে বেতারের মহাপরিচালক কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার জন্য নির্দেশনা দিলেও তারা কেউই ক্যামেরার সামনে কথা বলেননি।

পরে, মুঠোফোনে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউ মহাপরিচালক বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অনুমতির দোহাই দেন। কেউ বা নিজে প্রকৌশলী নন বা অনুষ্ঠানের দায়িত্বে নেই এমন নানা অজুহাতে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

বেতার বলছে, এখন অ্যাপসেও বহির্বিশ্ব কার্যক্রম শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। সেটা কবে থেকে? বেতারের গবেষণা ও গ্রহণ কেন্দ্র বলছে গত ১৯ ডিসেম্বর এই অ্যাপস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

বহির্বিশ্ব কার্যক্রম বাংলাদেশের অডিও দূত হিসাবে কাজ করে। রোটেটেবল অ্যান্টেনা নষ্ট এবং তারপরেও অনুষ্ঠান নির্মাণ নিয়ে আর্থিক তছরুপের বিষয়টি কেউ খতিয়েও দেখেনি।