কোটচাঁদপুর পৌর নির্বাচন; সুবিধায় বিএনপি, দুই বিদ্রোহী নিয়ে বেকায়দায় আ.লীগ

বাংলাদেশ

দেশের প্রচীন ও ঐতিহ্যবাহী ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভায় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহরের অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ৩০ জানুয়ারির এ নির্বাচন নিয়ে কোটচাঁদপুর এখন পোস্টারের শহরে পরিণত।

১৮৮৩ সালে স্থাপিত প্রথম শ্রেণির কোটচাঁদপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৪টি কেন্দ্রে মোট ২৭ হাজার ৪৯৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন (শাহজান আলী-আওয়ামী লীগ, সালাহউদ্দীন বুলবুল সিডল-বিএনপি, সহিদুজ্জামান সেলিম-স্বতন্ত্র,  জাহিদুল ইসলাম জিরে-স্বতন্ত্র), সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। কোটচাঁদপুর পৌরসভার যেদিকে চোখ পড়বে সেদিকেই শুধু পোস্টার আর পোস্টার, এ যেন পোস্টারের নগরী। সর্বত্র লিফলেট, পোস্টার আর মাইকিং, আছে প্রার্থীদের নির্বাচনি অফিস। এদিকে ভোটাররা খুঁজে ফিরছেন যোগ্য প্রার্থী, চাই এলাকার উন্নয়ন। সাধারণ মানুষের মাঝে আছে ভোটের আমেজ। পৌর নির্বাচন নিয়ে অনেকের আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সবাই যেন ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশের দাবি তাদের।

ভোটের প্রচার-প্রচারণাকে উৎসবমুখর করে তুলছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, তুলে ধরছেন তাদের কর্মকাণ্ড। পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাফর ইকবল শান্তি জানান, তার এলাকায় হিন্দু-মুসলিমসহ ১৬টি জাতের মানুষের বসবাস। এলাকার রাস্তা-ঘাট, ব্রিজসহ সামাজিক নিরাপত্তা, বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় তিনি পৌঁছে দিয়েছেন। ভোটাররা এবারও তাকে বিজয়ী করবে বলে আশা করছেন তিনি।

বিএনপি-জামায়াতের এক সময়কার ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত কোটচাঁদপুর এলাকাটিতে একক প্রার্থী নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা রয়েছেন সুবিধায়। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সালাহউদ্দীন বুলবুল সিডল ধানের শীষ প্রতীকের দলীয় প্রার্থী। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বিজয়ী হবেন জানিয়ে এই প্রার্থী অভিযোগ করেন, প্রতি রাতে লাঠিসোঁটা, রামদা-হকিস্টিক নিয়ে সংঘবদ্ধ মহড়া আর মিছিলে আতঙ্কে আছেন সমর্থক ও ভোটাররা।

এদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী। অন্যদিকে পৌরসভার বর্তমান মেয়র জাহিদুল ইসলাম জিরে আ.লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন।

আর গত দুটি নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করলেও হেরে যান আ.লীগের পৌর-শাখার আহ্বায়ক সহিদুজ্জামান সেলিম। এবার মনোনয়ন চেয়ে না পেলেও পৌর শাখার এই নেতা শক্ত প্রার্থী হিসাবেই মাঠে আছেন। দল তাকে বহিষ্কার করলেও লড়ছেন স্বতন্ত্র হয়ে। তার অভিযোগ ভোটকেন্দ্রগুলো জবরদখল করা হতে পারে, হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে, সমস্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিন্তু প্রতিকার নেই।

দুই বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বে-কায়দায় ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ। তবে এসব প্রার্থী আর কোন্দলকে বড় আকারে দেখছেন না কোটচাঁদপুর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকিসহ নেতৃবৃন্দ।

মিকি জানান, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকার টিকিট যার হাতে তুলে দিয়েছেন তিনিই আমাদের প্রার্থী, এর বাইরে কোন কিছু ভাববার সুযোগ নেই। দলীয় প্রার্থী শাহাজান আলীকে  জয়যুক্ত করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ ও ওয়ার্নিং দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে শান্তিপূর্ণ ভোটের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওয়াহিদ মুরাদ। তিনি জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে।