রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবকে খুন করতে নয়, বরং হাবিবই ফোন করে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি রাসেলকে গভীর রাতে তার বাড়িতে ডেকে নিয়েছিলেন।
রাসেলের নামে স্ত্রীর দেনমোহর মামলা সমঝোতার নামে হাবিব নিয়েছিলেন অগ্রিম ২০ হাজার টাকা। দাবিকৃত আরো ৪০ হাজার টাকা না দেয়ায় রাসেলকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়া হয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) এমনটিই জানিয়েছেন রাসেল। তবে তা বরাবরের মতোই অস্বীকার করেছেন হাবিব।
গত ১৩ জানুয়ারি (বুধবার) দিবাগত রাতে পুঠিয়ার শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা করম আলীর নাতিকে পিটিয়ে পুলিশে দেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব খান। হাবিব নিজে বাদী হয়ে চুরি ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পুঠিয়া থানায় মামলা করেন রাসেলের বিরুদ্ধে। এরপর ১৪ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে নিন্দার ঝড় উঠে। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিব ও পুঠিয়া থানা ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কার দাবিতে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন হয়।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাজশাহীর আদালত থেকে জামিন পান রাসেল। তিনি বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হলে তিনি মামলায় পড়েন। স্ত্রীর দেনমোহর ছিলো ২ লাখ টাকা। তবে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব সমঝোতা করে দেয়ার কথা বলে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নেন তার কাছ থেকে। সমঝোতার পর আরো ৪০ হাজার টাকার দাবি ছিলো হাবিবের। পরে পুঠিয়া থানায় সমঝোতা বৈঠক বসলে সেখানে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে রাসেলের স্ত্রী মামলা তুলে নিতে চান। কিন্তু রাসেল এতো টাকা দিতে রাজি না হলে সে সমঝোতা বৈঠক ভেস্তে যায়।
রাসেল আরো জানান, এ ঘটনার পর তিনি শামীম নামের আরেকজনের মাধ্যমে দেনমোহর মামলা থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পান। কিন্তু এরপরও রাসেলের কাছে ৪০ হাজার টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছিলেন হাবিব। কিন্তু রাসেল একাধিকবার হাবিবকে বলেছে, ‘আপনি সমঝোতা করে দিতে পারেননি। আপনাকে কেনো টাকা দিতে হবে? আপনি আমার ২০ হাজার টাকা ফেরত দেবেন।’
রাসেল জানান, ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হাবিব তার পুঠিয়া সদরের চেম্বারে খিচুড়ি খাওয়ার আয়োজন করে। সেখানে রাসেলও খিচুড়ি খেয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর রাসেলকে ফোন করে হাবিব তার বাড়িতে এসে দেখা করতে বলে। রাত দুইটার পরে রাসেল হাবিবের বাড়িতে যান। এসময় হাবিব রাসেলকে তার ঘরে নিয়ে আবারো ৪০ হাজার টাকা দিতে চাপ দেন। কিন্তু রাসেল বলেন, ‘অন্যজন সমঝোতা করে দিয়েছে, আপনি টাকা চান কেনো?’ রাসেল বলেন, ‘এসময় হাবিব বলেন, পুলিশকে টাকা দিতে হবে। টাকা তুই না দিলে তোর বাপ দিবে’। বলেই চিৎকার করে হাবিব। এসময় হাবিবের ভাই ও এলাকাবাসী ছুটে আসে। হাবিব তাদের জানায়, রাসেল তাকে খুন করতে এসেছে। শুনেই তারা লাঠি দিয়ে রাসেলকে পেটাতে থাকে।
রাসেল আরো বলেন, তার ভাইয়েরা বলছিলো চুরি করতে এসেছে। আর হাবিব বলছিলো খুন করতে এসেছে। সবাই আমাকে পশুর মতো মারছিলো। মারের আতংকের মধ্যেই তারা আমাকে দিয়ে বলায় যে আমি মোবাইল চুরি করতে এসেছি। এরপর পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
রাসেল দাবি করেন, ‘রাত ২টার দিকে পর পর দু’বার ফোন করে হাবিব আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছে। আমার ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করলেও এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।’
এবিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘সেদিন রাতে আমার অফিসে খিচুড়ি খাওয়া হচ্ছিলো এটা সত্য। তবে আমি রাসেলকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যাইনি। প্রমাণ করতে পারলে যে কোন শাস্তি আমি মেনে নেবো।’ টাকা চাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন হাবিব।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান নিজ ঘর থেকে আটক করে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি রাসেলকে পুলিশে দেন। এরপর হত্যা ও চুরির চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দেন। এ ঘটনার পর রাসেল ও তার পরিবার দাবি করেন, ৬০ হাজার টাকার জন্য তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে পুলিশে দেয় হাবিব।