ভুয়া মৃত্যু সনদ প্রদান, প্রতারিত এক বৃদ্ধা ও শিল্পী দম্পতি

আইন ও কানুন

বৃদ্ধা মায়ের নামে থাকা জমি দখলের জন্য মা, বোন ও বোন জামাইয়ের নামে মামলা করে অমানবিকতার নজির স্থাপন করেছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কৃপাচার্য্য বৈরাগী।

তার করা মামলায় বৃদ্ধ বয়সে একমুঠো খাওয়ার অভাবে জামাইয়ের বাড়িতে অতিকষ্টে দিনানিপাত করছেন বৃদ্ধা প্রবাসী বৈরাগী ও অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন কৃপার একমাত্র বোন বিথীকা বৈরাগী ও তার স্বামী। আর এ মামলায় সহযোগিতা করতে স্থানীয় হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাঁড়ে দিয়েছেন মৃত্যুর ভুয়া সনদ। অভিযোগ আছে, এ সনদ প্রদানে তিনি নিয়েছেন মোটা অংকের উৎকোচ।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন কৃপার বোন জামাই বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক নিশিকান্ত বৈরাগী। এসময় ওই মামলার অপর আসামি নিশিকান্তের স্ত্রী বিথীকা বৈরাগী ও ইউপি সদস্য কৃপাচার্য্যরে করা অপর আরেকটি মামলার একমাত্র আসামি তার বৃদ্ধা মা প্রবাসী বৈরাগী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তেব্যে তারা উল্লেখ করেন, আনুমানিক ২৫ বছর আগে কৃপাচার্য্য বৈরাগী তার বাবার অমতে বিয়ে করায় ও তাকে অবহেলা করায় মনকষ্টে বাড়ির অদূরে স্ত্রী প্রবাসী বৈরাগীকে নিয়ে একটি মন্দির স্থাপন করে সেখানে দিনযাপন করতে থাকেন দুলাল বৈরাগী। নানা ঝামেলায় এসময় দুলাল বৈরাগী তার জমি দুইভাগে ভাগ করে একভাগ ছেলে কৃপাকে (আনুমানিক ১০ বিঘা) আর অপরভাগ নিজে ভোগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ হলে স্বজনরা তাকে কেশবপুর মডার্ণ হাসপাতালে ভর্তি করে। ভর্তির ৩ দিন পর সুস্থ হলে ৪ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে বাড়ি আনা হয়। এদিন তিনি বাড়ি ওঠার আগে তার স্ত্রী প্রবাসী বৈরাগীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার দখলে থাকা ২ একর ৭৪ শতক জমি স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এর পরের দিন ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরো জানানো হয়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়মানুযায়ী স্বজন ও গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে তাকে জীবদ্দশায় তার ইচ্ছানুযায়ী সমাহিত করা হয়। এরপর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের কয়েকদিন পর সদ্য স্বামীহারা প্রবাসী বৈরাগী ছেলে বউয়ের সান্নিধ্য না পেয়ে জামাইয়ের বাড়ি অভয়নগর উপজেলার রামসরা গ্রামে গিয়ে ওঠেন। হঠাৎ একদিন বাড়িতে পুলিশ গিয়ে তাকে জোর করে ধরে আনার চেষ্টা করে। মেয়ে-জামাই কারণ জানতে চাইলে জানানো হয়, “ছেলে কৃপাচার্য্য বৈরাগী থানায় অভিযোগ করেছে তার মাকে (প্রবাসী বৈরাগী) ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তার বোন ও ভগ্নিপতি বাড়িতে নিয়ে জমি লিখে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাই তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে।” এসময় বুঝিয়ে বললে পুলিশ ফিরে যায়। অবশ্য পরে আরো একবার একই উদ্দেশ্যে পুলিশ বাড়িতে গেলে একইভাবে ফিরে আসে। এতে সুবিধা না পেয়ে একপর্যায়ে কৃপা ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর তার বোন বিথীকা বৈরাগী ও বোন জামাই নিশিকান্তের নামে জালিয়াতি মামলা করে। এসময় জানা যায়, স্থানীয় হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বিপদভঞ্জন পাঁড়ে মোটা টাকা উৎকোচ নিয়ে দুলাল বৈরাগীর মৃত্যু আগের দিন অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে মৃত্যু সনদ প্রদান করে। দিবালোকের মতো একটি সত্য ঘটনা মিথ্যা করে ফেলেন তিনি। বিষয়টি মৃত্যুর দিন দাফন করতে আসা ওই ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বরসহ বিশিষ্টজন ও গ্রামবাসীদেও অনেকে চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তার জবাব, “যা ভালো বুঝেছি করেছি তাই করেছি। পারলে কিছু করেন গিয়ে”।

লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, কৃপার করা মামলায় গত ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। এক সপ্তাহ হাজতে থাকায় একদিকে নিশিকান্তের দীর্ঘ শিল্পী জীবনের অর্জিত সম্মান যেমন নষ্ট হয়েছে, কেমনি অপচয় হয়েছে অর্থের। শুধু বোন ও বোন জামাইয়ের সম্মান নষ্ট করে ক্ষান্ত হয়নি কৃপা। তার কুটকৌশল থেকে রক্ষা পাইনি তার বৃদ্ধা মাও। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর তার মা প্রবাসী বৈরাগীর নামেও দেওয়ানি মামলা করে কৃপা। এছাড়া প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ফন্দি এটে কৃপা তার মা ও বোন ও বোন জামাইয়ের ক্ষতি করে চলেছে। বৃদ্ধা বয়সে ছেলে, বৌমা ও নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে দিন কাটানোর কথা থাকলেও চোখের জলে ভাসছে অসহায় প্রবাসী বৈরাগী। তার নামে তার চলার মতো সম্মতি থাকলেও সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে কুটবুদ্ধিসম্পন্ন কৃপা ও তার সহযোগী চেয়ারম্যান বিপদভঞ্জন পাঁড়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা করেন ভুক্তভোগীরা।