বিশ বছরে কোটিপতি তরুণ, নেপথ্যে প্রতারণা

আইন ও কানুন

বয়স মাত্র বিশ, পড়াশুনা অষ্টম শ্রেণি। চড়েন নামী-দামী ব্র্যান্ডের গাড়িতে। যাতায়াত অভিজাত পাঁচতারকা হোটেলে। কিন্তু নিজেকে স্নাতক পাশ দাবি করেন ভোলার দক্ষিণ আইচা এলাকার আশরাফুল ইসলাম দ্বীপু।

কখনও মার্কিন নাগরিক, কখনো এনএসআইয়ের পরিচালক, কখনও সরকারি বড় কর্মকর্তা। প্রতারণায় যখন যে পরিচয় প্রয়োজন, সে রূপেই আবির্ভূত হন আশরাফুল ইসলাম দীপু। মাত্র বিশ বছরে কোটিপতি বনে যাওয়া ওই তরুণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজের পাশাপাশি খুলেছেন ইউটিউব চ্যানেলও। এসব মাধ্যমে চালান নিজের প্রচারণা।

সরকারি বড় কর্মকর্তাসহ নানা পরিচয় দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে দাতা সংস্থার সহায়তার ত্রাণ আত্মসাতের মধ্য দিয়ে তার প্রতারণা শুরু। এরপর স্কুলের কর্মচারি নিয়োগ, উপবৃত্তির কার্ড পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

করোনা মহামারিতে ‘মানবিক টিম’ নামে ফেসবুক আইডি খুলে প্রবাসীদের থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। সুনির্দিষ্ট কোনও পেশা না থাকলেও, মাত্র বিশ বছর বয়সে কোটি টাকার মালিক আশরাফুল।

পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন, সম্প্রতি এমন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নজরে আসে নোমান গ্রুপ কর্তৃপক্ষের। প্রতারণার নিপুণ ছক দেখে পুলিশের শরণাপন্ন হন তারা।

জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিক্স লিমিটেডের হেড অব প্রটোকল মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে দেখতে পাই যে, আশরাফুল ইসলাম দীপু নামে এক ভদ্রলোক নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জয়েন করেছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু এরকম কোন নিয়োগ আমাদের এখানে হয়নি বা আমাদের এরকম কোন পরিকল্পনাও ছিলনা। আমরা চাই তার শাস্তি হোক।”

আশরাফুল যেসব নামী ব্র্যান্ডের গাড়ি ভাড়া করে চলতেন, প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি সেসব গাড়ির চালকরাও। ভুক্তভোগী গাড়ি চালক বলেন, “মাঝে মাঝেই আমাদের কোম্পানির গাড়ি ভাড়া নিতেন তিনি। আমার স্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে সেই টাকা আটকে দেন।”

নোমান গ্রুপের অভিযোগের সূত্র ধরে প্রতারক আশরাফুল ইসলাম দীপুকে ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের এডিসি আশরাফউল্লাহ বলেন, “ফেসবুকে আশরাফুল ইসলাম দীপু নামে একজন দাবি করছে সে নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। কে বা কারা এর সাথে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”