পেট্রোল বোমায় ৮ জনকে হত্যা: ছয় বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ

আইন ও কানুন

আজ শোকাবহ ৬ ফেব্রুয়ারি। আজকের এই দিনে গাইবান্ধার তুলসীঘাটে বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে শিশু ও নারীসহ ৮ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

২০১৫ সালে বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জামায়াতসহ ২০ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাতে সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কের তুলসীঘাটে বুড়ির ঘর এলাকায় ঢাকাগামি নাপু এন্টারপ্রাইজের নৈশকোচ অবরোধকারীদের পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হয়। নৈশকোচটি সুন্দরগঞ্জের পাঁচপীর বাজার থেকে রাত পৌনে  ১১টার দিকে বুড়ির ঘর এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় ভস্মিভূত হয়ে যায়। আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সদরের মালিবাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩০), খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের জিলহজ আলী (৩৫), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামের খয়বর হোসেন দুলুর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), পশ্চিম সীচা গ্রামের সাইব মিয়ার মেয়ে হালিমা বেগম (৪২), চন্ডিপুর গ্রামের  শাজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২২) এবং ওই গ্রামেরই বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী রাণী দাস (১০)। এছাড়া রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চন্ডিপুর গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (১০) ও স্ত্রী সোনাভান বিবি (৪৫)।

পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় গাইবান্ধা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার বাদী হন সদর থানার এএসআই সফিউর রহমান। মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৬০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২৮-৩০ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত শিবিরকর্মী রেজানুর রহমান রূপক ও তাসকিনুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করার পরবর্তীতে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে। মামলার প্রধান আসামি শিবির ক্যাডার মোস্তফা মঞ্জিল ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ঘটনার পর ওই দিনই ৬৩ জনকে আসামি করে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ঘটনার ১ বছর পর ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ ৭৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

ওই ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হন। বেঁচে যাওয়াদের প্রায় সবাই আগুনের ক্ষত নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ এখনও আর্থিক সঙ্কটে দুুর্বিষহ দিনও কাটাচ্ছেন। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার কাজ। বিচারের এ দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষুব্ধ নিহতের স্বজন, আহত ও এলাকাবাসী।

দ্রুত বিচার কাজ শেষের আশাবাদ জানিয়েছেন রাষ্টপক্ষের আইনজীবী। পাবলিক প্রসিকিউটর শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, মোট আসামির মধ্যে ৬৫ জন উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন। ৭ জন পলাতক ও ৫ জন মারা গেছেন।

মামলার দীর্ঘসূত্রিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১ বছর যাবত অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক না থাকায় মামলার সাক্ষীগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সে জন্যই এই মামলার রায় বিলম্ব হচ্ছে।