ডার্ক ওয়েবে অবাধ বিচরণ আর থ্রিলার সিনেমা দেখে নতুন নতুন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর শিক্ষার্থীরা। এমনকি অপরাধের পর সেখান থেকে বাঁচার কৌশলও রপ্ত করে ফেলছেন অনেকেই।
গোয়েন্দারা বলছেন, ইউটিউব আর হিন্দি সিরিয়াল দেখে নিজেদের অজান্তেই বড় ধরনের অপরাধের পথ বেছে নিচ্ছেন এরা। মনোরোগ বিশেজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত অনলাইন আসক্তি কমানো না গেলে এসব অপরাধ বাড়বে।
ঘটনাটি ৫ই জানুয়ারি বগুড়ার। ১৬ বছর বয়সী স্কুলছাত্র কৌশিকের দুঃসাহসিক ব্যাংক ডাকাতির দৃশ্য এটি। বলিউডের থ্রিলার সিনেমা ‘ধুম-৩’র ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য ১৫৪ বার দেখে নিজেকে প্রস্তত করে এই কিশোর। ছুরিকাঘাত ও দাহ্য পদার্থ ছুড়ে দুই নিরাপত্তারক্ষীকে আহত করে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করে।
মুখোশ পরা অবস্থায় তার ছোঁড়া দাহ্য পদার্থ ও ছুরিকাঘাতে দুই আনসার সদস্য আহত হয়। হাতে বিশেষ গ্লাভস পড়ে ব্যাংকের ভেতরের ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ঘটনার ১৮ দিন পর গাজীপুরের টঙ্গীর চাচার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
একই অবস্থা ইমাম হোসেন নামের আরেক কিশোরের। থ্রিলার হিন্দি সিরিয়াল দেখে ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর গাড়ীতে নকল বোমা রেখে চাঁদা দাবি করে সে।
২০ লাখ টাকা দিতে ব্যার্থ হলে ব্যবসায়ীর পরিবারকে হত্যার হুমকিও দেয় হিন্দি ভাষায়। ইউটিউব দেখে লাল স্কচটেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেন্সিল ব্যাটারি ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বোমা সদৃশ বস্তুটি তৈরিতেও বেশ পটু।
তবে, তাদের দুজনকেই ছাড়িয়ে গেছে ২০ বছরের দিপু। নিজেকে কখনো গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বড় কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে ঘোল খাইয়েছে প্রশাসনের বড়বড় কর্তাদের। এই বয়সেই প্রতারণার মাধ্যমে কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
সবগুলো ঘটনায় জড়িতরা বয়সে কিশোর। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন থ্রিলার সিনেমা দেখে নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছেন তারা।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ডার্ক ওয়েভে অবাধ বিচরণের ফলে তাদের মাঝে এসব অপরাধের বাসনা জাগে। এমনকি অপরাধ থেকে বাঁচার কৌশলও রপ্ত করার চেষ্টা করছে তারা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার, ‘থ্রিলার দৃশ্য দেখার মাধ্যমে নিজেদের বড় প্রমাণ করতেই মনের অজান্তে এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। স্কুল কলেজগুলোতে খেলার মাঠের পাশাপাশি বার্ষিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা পারে এসব অপরাধ কমিয়ে আনতে।’