১০ বছরেও জানা গেল না সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার পর এলিট ফোর্স র্যাব দায়িত্ব নিয়েও তদন্তে একচুল এগুতে পারেনি। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত সময় পিছিয়েছে ৭৮ বার।
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১১। গভীর রাত। নিজ বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। এই জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশের মানুষ যেমন প্রতিবাদ জানায়, সাংবাদিকরাও মাঠে নামেন অরাধীদের আটক ও বিচারের দাবিতে৷ তখন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো এই ইস্যুতে এক হয়ে কর্মসূচি দিতে শুরু করে৷ সাংবাদিকদের দলীয় পরিচয় দূরে রেখে এক হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দেয়৷ কিন্তু বেশি দিন এই ঐক্য থাকেনি৷ তাই মানববন্ধন বা প্রতীকী অনশনের বাইরে আর কোনো জোরালো কর্মসূচি হয়নি৷

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। এরপর কেটে গেলো ১০ বছর। হতাশ স্বজনেরা।
নিহত রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বলেন, ‘তদন্তকারী সংস্থার এ ধরনের আচরণই তো বলে দিচ্ছে, বিচার তো পরের কথা এ তদন্তের রহস্য উন্মোচনের কোন আশা আমরা দেখিনা। তদন্তকারী সংস্থার অদক্ষতা বা অজানা কোন চাপে তারা তা উন্মোচন করতে চাচ্ছেনা। যে কারণে বিচার পাওয়ার আশা আমাদের কাছে অনেক দূরে মনে হয়।’

প্রথমে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের। তারা ব্যর্থ হওয়ায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় র্যাবকে। কিন্তু নয় বছরেও মামলার তারা তদন্তকাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এরমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে পাঁচবার।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন পন্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে সকল ধরনের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তদন্তাধীন বিষয়ে খুব বেশ কিছু বলাটা সমাচীন হবে না। র্যাব সকলকে আশ্বস্ত করতে চায়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাটি চলমান রয়েছে।’
তদন্ত শেষ করতে না পারায় প্রশ্নতো উঠবেই, বলছেন খোদ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু। তিনি জানান, ‘দীর্ঘদিন হলো এটার তদন্ত শেষ হচ্ছেনা। এটা একটা প্রশ্ন, জনমনেও প্রশ্ন। আমি বলতে চাই যে, অতি দ্রুত এ মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।’
গেল তেসরা ফেব্রুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ৭৮ বারের মতো সময় নিয়েছে র্যঅব। আগামী ১১ মার্চ পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দিয়েছে আদালত। সেদিন আদালতে হাজির করার মতো নতুন কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নেই র্যাবের কাছে।