খোদ কারাগারে গড়ে উঠছে ইয়াবা কারবারের চক্র

বাংলাদেশ

খোদ কারাগারে গড়ে উঠছে ইয়াবা কারবারের চক্র। গডফাদারদের হুকুমে চার দেয়ালের বন্দি জীবনেও নতুন সহযোগী দলে ভেড়াতে তৎপর আসামিরা।

টোপের মুখে মাদক কারবারের জালে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। তারপর তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে ইয়াবা পরিবহণ, সরবরাহ ও বিক্রিতে নামাচ্ছে গডফাদাররা। সম্প্রতি দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর এ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। 

মফিজুর রহমান, কক্সবাজারের বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী। পর্দার আড়ালে থেকে দেশজুড়ে গড়ে তুলেছেন মাদকের জাল। প্রতিমাসেই শত কোটি টাকার ব্যবসা তার।

দু’হাজার ঊনিশে ফেন্সিডিলসহ ধরা পড়ার পর, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থান হয় আব্দুর রহমান সোহাগের। সেখানে মফিজের ইয়াবা পরিবহণে জড়িত পিক-আপ চালক রুবেলের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। জামিনে ছাড়া পেয়ে মফিজের রাজধানী কেন্দ্রিক ব্যবসার প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন সোহাগ।

ইয়াবা সরবরাহকারী আব্দুর রহমান সোহাগ বলেন, আমি কাশিমপুর কারাগারে ছিলাম সেখানে রুবেল নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। রুবেল আমাকে মফিজের সঙ্গে পরিচয় করায় দেয়। মফিজের মাল রুবেল ঢাকায় নিয়ে আসতো। আর আমি ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ডেলিভারি দিতাম। 

দু’হাজার বিশের গোড়ার দিকে ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর, নারায়ণঞ্জ কারাগারে মফিজের ভগ্নিপতি কেফায়েতের সঙ্গে পরিচয় হয় মোহাম্মদ কবিরের।  জামিনে ছাড়া পেয়ে মফিজের ইয়াবা সাম্রাজ্যে ঢুকে পড়েন তিনি।

কারাগারে মাদক চক্রের সদস্য যোগাড়ের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রি.জে. মো. মোমিনুর রহমান মামুন।

তিনি বলেন, কারাগারের ভেতরে এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে আসলে আমার ওইরকম ভাবে জানা নাই। আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি তার মধ্যে একটা টাস্কফোর্স গঠন করেছি যাতে তারা হঠাৎ করে অভিযান চালিয়ে মাদক রোধ করতে পারে।

জিজ্ঞাসবাদে সোহাগ ও কবির জানান, প্রায়দিনই কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবার চালান পাঠান মফিজ।  সেই চালান গুদামজাত করা হয় বসিলায় একটি গোপন স্থানে। ক্রেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন মফিজ নিজেই। বেচাকেনা চূড়ান্ত হলে রাজধানী ও আশেপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে ইয়াবা সরবরাহ করেন সোহাগ।  আর নারায়ণঞ্জে মফিজের ইয়াবা বিক্রির দায়িত্ব পালন করেন সাত মামলার আসামি কবির। তারা সাধারণত থ্রি-পিস বিক্রেতা সেজে মাদক পরিবহণ করে থাকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের (মতিঝিল) উপ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তারা থ্রি-পিস বিক্রির নামে ইয়াবা বিক্রি করে আসছিল। এই চক্রের যে মূলহোতা সে কক্সবাজার থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ করে। আর্থিক যে লেনদেন সেটাও তার মাধ্যমেই হচ্ছে। আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি তারা শুধু ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

দুই আসামির কাছে থেকে এক কোটি টাকা মূল্যমানের পঞ্চাশ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের পর, এখন গডফাদার মফিজসহ চক্রটির অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযানে গোয়েন্দা পুলিশ।