একযুগ পর সারাদেশে ‘এক রেটে’ ইন্টারনেট সেবামূল্য নির্ধারণ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

অবশেষে একযুগ পর সারাদেশে নির্ধারণ হলো ‘এক রেটে’ ইন্টারনেট সেবামূল্য (ট্যারিফ)। এতে এখন থেকে কম দামে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। এই নতুন দাম কার্যকর হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে।

সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর প্রতিশ্রুত “ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য সকল ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) এবং বেসরকারি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) সমূহের ট্যারিফ চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উল্লিখিত ট্যারিফের ‍শুভ উদ্ধোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ মোস্তাফা জব্বার ।

চালুকৃত নতুন ট্যারিফের আওতায় এনটিটিএন অপারেটরদের সকল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৬ টি প্রোডাক্টের প্রতি এমবিপিএস ডাটার ট্রান্সমিশনের জন্য ১৩ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, জেলা থেকে জেলায় (District to District) ১৫টি প্রোডাক্টের জন্য ১৩ টাকা হতে ৩০০ টাকা এবং দূরবর্তী অঞ্চলের (Long Haul Areas) ১৫টি প্রোডাক্টের জন্য ২৫ থেকে ৫০০ টাকা ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ (গ্রেড অব সার্ভিস বজায় রাখা শর্তে) কোয়ালিটি অব সার্ভিস এবং কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্সকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মানদন্ড নির্ধারণে ৫টি গ্রেড (এ,বি,সি,ডি,ই) চালু করা হয়েছে।

বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী সকল বেসরকারী ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানের মোট ১১ টি প্রোডাক্টের জন্য সারাদেশে ট্রান্সমিশন ব্যয়সহ ৩৩০ টাকা হতে ৩৯৯ ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ (গ্রেড অব সার্ভিস বজায় রাখা শর্তে) কোয়ালিটি অব সার্ভিস এবং কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্সকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মানদন্ড নির্ধারণে ৩টি গ্রেড (এ,বি,সি )চালু করা হয়েছে। এছাড়া, সারাদেশে আইএসপি সেবার ক্ষেত্রে গত ৬ জুন তারিখে প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য চালুকৃত ট্যারিফ প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ (গ্রেড অব সার্ভিস বজায় রাখা শর্তে) কোয়ালিটি অব সার্ভিস এবং কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্সকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মানদন্ড নির্ধারণে ৩টি গ্রেড (এ,বি,সি)চালু করা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকদের জন্য ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করা হয়েছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা পৌঁছাতে আইএসপির পাশাপাশি আইআইজি এবং এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাই তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই ট্যারিফ নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে জানিয়ে মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহবান জানান তিনি। স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে মানুষ আজ ডিজিটাল সেবার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। পরবর্তীতে বিটিআরসি’র সিস্টেমস এন্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ আইএসপি, আইআইজি ও এনটিটিএন ট্যারিফের তুলনামুলক চিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়া সর্ম্পকে তথ্য বহুল উপস্থাপনা প্রদান করেন।

সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ মোঃ রফিকুল মতিন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়তে এবং প্রান্তিক জনগণকে স্বপ্লমূল্যে সেবা দিতে ট্যারিফ নির্ধারণ জরুরি ছিল।

দেশে সরকারি বেসরকারি এনটিটিএন মিলে প্রায় এক লক্ষ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে উল্লেখ করে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ আল ইসলাম সরকারি এনটিটিএন অপারেটরগুলোকে এক দেশ এক রেটে আসার আহবান জানান। মোবাইল অপারেটরদের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণের অনুরোধ জানান তিনি।

এনটিটিএন ও আইআইজির ওপর ট্যারিফ নির্ধারণকে স্বাগত জানিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব আমিনুল হাকিম বলেন,আগামীতে প্রতিটি জেলায় পয়েন্ট অব প্রেজেন্স(পপ) স্থাপন হলে গ্রাহক মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাবে। তাছাড়া তিনি আগামী ২৬ মার্চ ২০২২ তারিখ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএসের খরচে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর ঘোষণা দেন ।দূর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবা নিতে খরচ বেড়ে গেলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নে ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, ট্যারিফ নির্ধারণের ফলে মেট্রোপলিটন এলাকার পাশাপাশি জেলার গ্রাহকগণও কাঙ্খিত সেবা পাবে। টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যেমন- এক দেশ এক রেট, এনইআইআর, অর্ধেক খরচে বাংলায় এসএমএস সুবিধা, টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ক্রয়সহ গ্রাহকের কোয়ালিটি অব সার্ভিস ও কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্স নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন ।

আজকের এই পদক্ষেপ এর সুফল যেন গ্রাহক পর্যায়ে নিশ্চিত হয় এ বিষয়ে তার দিকে যথাযথ মনিটরং থাকবে বলে নিশ্চিত করেন এবং অবৈধ আইএসপি বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মোঃ মুহিউদ্দিন আহমেদ, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হুসেইন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার এ.কে.এম শহীদুজ্জামান, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন,স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদুল আলম, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ এহসানুল কবির, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্স বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের মহাপরিচালক প্রকৈাশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামানসহ পিজিসিবি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, এনটিটিএন ও আইআইজিএবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।